রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সিলেটে ‘পল্লী ডাক্তার’ হায়াত খুন রহস্যঘেরা

সিলেটে ‘পল্লী ডাক্তার’ হায়াত খুন রহস্যঘেরা

স্বদেশ ডেস্ক: কোম্পানীগঞ্জের ‘পল্লী ডাক্তার’ রেজাউল করিম হায়াত খুনের ঘটনা এখনো রহস্যেঘেরা। লাশ উদ্ধারের ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো এ খুনের ঘটনার কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে- প্রথম দফা রিমান্ডে খুনের ব্যাপারে মুখ খুলেনি গ্রেপ্তার হওয়া নগরীর লালবাজারের হোটেল এমদাদিয়ার ম্যানেজার প্রাণেশ ও নাইটগার্ড ফয়সল। এ কারণে গতকাল নতুন করে আরো দুইদিনের পুলিশি রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। পুলিশ জানায়- পল্লী ডাক্তার হায়াত খুনের ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। রিমান্ডে আসামিরা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়ার কারণে নতুন করে তাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের উত্তর রাজনগর কালাসাদেক এলাকায় বাড়ি রেজাউল করিম হায়াতের। এলাকায় ফার্মেসি ছিল তার।

এ কারণে স্থানীয়ভাবে গ্রামে তাকে ‘পল্লী ডাক্তার’ হিসেবে ডাকেন সবাই। পরিবারের সদস্যরা জানান- এলাকার একটি মারামারির ঘটনায় রেজাউল করিম হায়াতসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সামাজিকভাবে সালিশের মাধ্যমে ওই ঘটনা শেষ হলেও আদালতকে জানানো হয়নি। এ কারণে গত ডিসেম্বরে হায়াতসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বিষয়টি শোনার পর গত ২৮শে ডিসেম্বর বাড়ি থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে চলে আসেন রেজাউল করিম হায়াত। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি সিলেটে আসেন বলে জানান। সিলেটে এসে তিনি তালতলাস্থ হোটেল বিলাসে ওঠেন। ওই হোটেলে কাপড় রেখে পরদিন ২৯শে ডিসেম্বর তিনি রহস্যজনকভাবে নগরীর লালবাজারের হোটেল এমদাদিয়ায় যান। সেখানে ২০১ নম্বর কক্ষটি তার নামে ভাড়া নেন। ১লা ফেব্রুয়ারি এমদাদিয়ার পার্শ্ববর্তী হোটেল মোহাম্মদীয়ার পেছনে রক্তাক্ত অবস্থায় হায়াতের লাশ পাওয়া যায়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। হায়াতের লাশের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে ধারণা করে পুলিশ। তবে- লাশ উদ্ধারের দিন হোটেল এমদাদিয়ার ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি। এ কারণে লাশটিকে অজ্ঞাত হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। পরে নিহত হায়াতের স্বজনরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। নিহত হায়াতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন- হোটেল এমদাদিয়ার রেজিস্টার খাতায় তারা রেজাউল করিমের হায়াতের নাম পেয়েছেন। তিনি ২০১ নম্বর রুম ভাড়া নিয়েছেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কোতোয়ালি থানা পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জড়িত থাকার অভিযোগে হোটেলের ম্যানেজার প্রাণেশ, হোটেল বয় জমির ও নাইটগার্ড ফয়সলকে গ্রেপ্তার করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এস আই দিলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন- গ্রেপ্তার হওয়া প্রাণেশ ও নাইটগার্ড ফয়সলকে প্রথম দফা তিনদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কাজ চলছে। পুলিশ সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখছে বলে জানান তিনি। এদিকে- ঘটনার পর পরই পুলিশ হোটেল এমদাদিয়ার ২০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালায়। এখান থেকে তারা হায়াতের মোবাইল ফোন  পেয়েছে। বাথরুমে পেয়েছে মুখের মাস্ক। এ ছাড়া এমদাদিয়ার ওই কক্ষের দেওয়ালে রক্ত পাওয়া গেছে। ওই রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া নিহত হায়াতের লাশ উদ্ধারের স্থলের নিকটবর্তী স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার জুতা। এরপরও হোটেল এমদাদিয়ার ম্যানেজারসহ তিনজন ঘটনা সম্পর্কে মুখ না খোলার কারণে গত মঙ্গলবার প্রাণেশ ও নাইটগার্ড ফয়সলকে দুইদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। থানার ওসি এসএম আবু ফরহাদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘ হোটেল এমদাদিয়ার ২০১ নম্বর কক্ষে যে রক্ত পাওয়া গেছে সেটির নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডির ল্যাবে প্রেরণ করা হয়েছে। এখন জানার বিষয় হচ্ছে হোটেল কক্ষে যে রক্ত মিলেছে সেই রক্ত নিহত হায়াতের কি-না। যদি রক্ত হায়াতের হয় তাহলে তদন্ত অনেক এগিয়ে যাবে। আমরা বলতে পারবো- হোটেল কক্ষেই খুন হয়েছেন রেজাউল করিম হায়াত।’ নিহতের চাচাতো ভাই আব্দুর রহিম জানিয়েছেন- ‘লাশ উদ্ধারের দু’দিন আগে ভোরে তার ভাই হায়াত ফোন করে প্রাণে রক্ষার আকুতি জানিয়েছিলেন। ওই সময় তারা হোটেল এমদাদিয়ায় এসে খোঁজও করেছিলেন। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ ওই সময় কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় হোটেলের খাতাতে বোর্ডার হিসেবে তার ভাইয়ের নাম রয়েছে। এ ছাড়া হোটেলে রুম নেয়ার সময় তার ছবিও তোলা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হোটেল কর্তৃপক্ষ সবকিছু অস্বীকার করার বিষয়টি রহস্যজনক।’ তিনি দাবি করেন- ‘তার ভাইকে হোটেলের ভেতরেই খুন করা হয়েছে। কারণ- ২০১ নম্বর কক্ষে তার মোবাইল ফোন ও মাস্ক পাওয়া গেছে। এখন খুনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি এ ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877